August 1, 2025, 1:07 pm
শুভব্রত আমান, কুষ্টিয়া
সরকারের ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে খুলনা বিভাগের ৫ জেলায়। চাল সংগ্রহেও অর্জিত হয়নি শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা। সংকটকালে খাদ্য ঘাটতি পূরণে প্রতি বছর আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করে সরকার।
এ বছর খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৫১ হাজার ৯৭৩ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর মধ্যে পাঁচ জেলায় সংগ্রহ হয়েছে ১ শতাংশ। অন্যদিকে, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল থেকে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা অঞ্চলে এ বছর আমন ফসল ভালো হয়েছে। হাটবাজারে বেচাকেনাও ছিল ভালো। তারপরও ধান সংগ্রহ করতে পারেনি সরকারের স্থানীয় পর্যায়ের খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৫১ হাজার ৯৭৩ টন। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৬৯ টন।
এর মধ্যে খুলনা জেলায় ৬ হাজার ৩৬ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৩ টন। যশোরে ৯ হাজার ৭১৯ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ২২ দশমিক ৪০০ টন। চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৭০১ টন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে ৭৯ দশমিক ৬৪০ টন। মেহেরপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৪১ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছে ২১৭ টন। কুষ্টিয়ায় ৬ হাজার ৭২০ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৪৭ টন এবং বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলে কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি।
অন্যদিকে, চাল সংগ্রহে এ বছর সিদ্ধ ও আতপ চাল কেনায় কিছুটা সন্তোষজনক ফল রয়েছে। সিদ্ধ চাল সংগ্রহের হার শতকরা ৮৭ শতাংশ। আতপ চাল সংগ্রহের হার ৭০ শতাংশ। তবে চাল সরবরাহে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
এ বছর বিভাগের ১০ জেলায় সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৩৩৫ টন। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৫৪ হাজার ৭৬৯ টন। অর্থাৎ সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ। এর মধ্যে খুলনায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৮ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৭ হাজার ৬১৯ টন। বাগেরহাটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩০৪ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৫২ দশমিক ৬৮০ টন। সাতক্ষীরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৫৬০ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজার ১২০ টন। যশোরে ১৪ হাজার ২৪৭ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৭ দশমিক ৩৭০ টন। ঝিনাইদহে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ১৪৫ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৬ হাজার ১৯৪ টন। মাগুরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪৭২ টন। সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ৫৫৩ টন। নড়াইলে ১ হাজার ৯১৩ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ টন। কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ১৯৭ টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৭ হাজার ৮৬ টন। চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৯৪ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৯ টন। এছাড়া মেহেরপুরে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৫ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছে ৬৫২ দশমিক ২৩৯ টন।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা
আপৎকালে খাদ্য ঘাটতি পূরণে প্রতি বছর আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করে সরকার। জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এ অভিযান চলে মার্চ পর্যন্ত। স্থানীয় পর্যায়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ এ সংগ্রহের কাজ করে থাকে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর তিন টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি ধানের সরকারি দাম ধরা হয় ৩৩ টাকা ও প্রতি কেজি চালের দাম ৪৭ টাকা।
চালের বিষয়ে শতভাগ লক্ষ্য অর্জনের ব্যর্থতার জন্য খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিভাগের ১০ জেলার ৩৭ শতাংশের বেশি মিল মালিক চাল সরবরাহ করেননি। বিভাগে ১০ জেলায় ১ হাজার ১৬০টি মিল রয়েছে। এর মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েও চাল সরবরাহ করেনি ৪৮টি মিল। এছাড়া চুক্তির বাইরে ছিল ৩৮৩টি মিল।
অন্যদিকে, কুষ্টিয়ার খাজানগরে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদন কেন্দ্র।
চালকল মালিকদের অনীহার কারন হিসেবে তারা বলছেন, ‘সরকারের বেঁধে দেয়া দাম বাজারদরের থেকে অনেক কম। চাল উৎপাদনে যে খরচ সরকারেকে এভাবে চাল দিলে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
অবশ্য কুষ্টিয়ার খাজানগরের বৃহত্তম অটো রাইস মিল দেশ অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেক জানান, ‘সরকারের বেঁধে দেয়া দাম বাজার দামের থেকে অনেক কম। সরকারকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাস্তবতার নিরিখে দাম নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে কৃষক ও মিল মালিকদের ভর্তুকি দিতে হবে। অন্যথায় মিল মালিকরা লোকসানের মুখে পড়বেন।’
ওদিকে, ধান সংগ্রহে পুরোপুরিই ব্যর্থ ছিল খাদ্য বিভাগ। ধান সংগ্রহে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী একাধিক কারনে খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে আসেন না কৃষকরা বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সংগ্রহের সময় মনপ্রতি ১৪ শ টাকার বেশিতে ধান বিক্রি হয়েছে। সেখানে সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্য ছিল মনপ্রতি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা। এই সমস্যা খাদ্য বিভাগকে ফেস করতে হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওয়াজিউর রহমান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধান বিক্রিতে কৃষকদের সেভাবে আগ্রহী করে তোলা যায়নি। এছাড়া ক্রয়ে একটু দীর্ঘসূত্রতা, কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের বিক্রির টাকা পেতে দেরি হওয়াসহ বেশকিছু কারন রয়েছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
“মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করা হলেও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হতে হচ্ছে। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ধান-চাল সংগ্রহ ব্যবস্থা সহজ করা, কৃষকের অর্থ দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। স্থানীয় মিল মালিকদের আরো কার্যকরভাবে সংযুক্ত করা এবং আঞ্চলিক কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply